নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, শহীদ ও আহতদের পরিবারের আকাঙ্ক্ষা পূরণে নির্বাচনের আগেই সংস্কার ও গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার ও গণহত্যার বিচার নিশ্চিত না হলে, নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশা পূরণ হবে না। বরং নতুন করে ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে। তিনি আরো বলেন, জামায়াতে ইসলামীর প্রথম দাবি ছিল শহীদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে হবে এবং আহতদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা সহ সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে। সরকার এবিষয়ে উদ্যোগ নিলেও তা আশার আলো দেখেনি। শহীদদের নিয়ে প্রকাশিত গেজেটে অনেক শহীদের নাম আসেনি।
যারা আগামী দিনে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে, তারা শহীদ পরিবারের জন্য কিংবা আহতদের জন্য কি করেছে? - ০৫ আগস্ট পরবর্তী তাদের সামাজিক কার্যক্রম কি ছিল? - প্রশ্ন রেখে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জামায়াতে ইসলামী প্রকৃত সকল শহীদদের পরিবারকে নগদ ২ লাখ টাকা করে উপহার প্রদান করেছে এবং শহীদদের আত্মদানের ইতিহাস ১০ খন্ডে ১৫শ পৃষ্ঠার বই প্রকাশ করে ইতিহাস সংরক্ষণ করেছে। আমাদের এসব সার্বিক কার্যক্রম দলমত, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে করা হয়েছে। আজ ঢাকা-৬ আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভোটকেন্দ্র ভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দায়িত্বশীল সমাবেশ ও ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা-৬ আসন নির্বাচন পরিচালক কামরুল আহসান হাসানের সভাপতিত্বে রাজধানীর গেন্ডারিয়া সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ কামাল হোসেন এবং ঢাকা-৬ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ড. আব্দুল মান্নান। এছাড়াও ঢাকা-৬ সংসদীয় আসনের সকল সাংগঠনিক থানা আমীর, সেক্রেটারি এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থী সহ দায়িত্বশীল সহস্রাধিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জনগণ প্রতীক দেখে আর ভোট দিবে না! জনগণ দলীয় কর্মকান্ড বিবেচনা করে ভোট দিবে। তিনি বলেন, কারা নিজ দলের কর্মীদের হত্যা করছে, কারা ধর্ষণ করছে, কারা সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, লুটপাট করছে তা জনগণের কাছে দিবালোকের মতো পরিস্কার। তরুণদের কন্ঠে-কন্ঠ মিলিয়ে পুরো জাতি বলবে; বয়কট, বয়কট সন্ত্রাস-চাঁদাবাজ-দখলবাজ বয়কট। তরুণ প্রজন্ম বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে।
তিনি আরো বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকারের অন্যতম দায়িত্ব একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনমূখী দল, গ্রহণযোগ্য সব নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী অংশগ্রহণ করবে। তবে কোন কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচন-নির্বাচন করতে করতে নিজেদের অবস্থান জনগণের সামনে পরিস্কার করেছে, তারা শুধু নির্বাচন চায়, রাষ্ট্রের সংস্কার চায় না, গণহত্যার বিচার চায় না। বরং তারা আওয়ামী লীগের মতই ফ্যাসিবাদ কায়েমের পথে হাঁটছে।
জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে মানুষের নিরাপত্তা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও দ্রব্যমূল্য উর্ধগতি রোধ নিশ্চিত করা হবে উল্লেখ করে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও মানুষ নিরাপদ নয়, নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর সবাই নিরাপত্তাহীনতায়। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলেই মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পাবে এবং মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে দ্রব্যমূল্য নির্ধারিত হবে। কেউ চাইলেই নিজের ইচ্ছেমতো পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিতে পারবে না। তাই নতুন বাংলাদেশ গড়তে তিনি দলমত, ধর্মবর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব এগিয়ে আসতে দেশবাসীকে আহ্বান জানান।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, বিগত ৫৩ বছর রাষ্ট্র পরিচালিত হয়েছে মানুষের তৈরি মতবাদে। আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইন উপেক্ষা করে নিজস্ব মতবাদে রাষ্ট্র পরিচালিত হওয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়নি। ৫ আগস্ট পরবর্তী কোন কোন দল চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, দখলবাজিতে ব্যস্ত রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী কোন কিছু দখল করেনি। জামায়াতে ইসলামী শুধু মানুষের হৃদয় দখলের কাজ করছে। ঢাকা ৬ আসন হলো রাজধানীর হৃদপিন্ড। এই হৃদপিন্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকার জনতার জন্য সুস্থ আর গতিশীল রাজনীতি উপহার দিতে চায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সন্ত্রাস আর দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তেই আমাদের শহীদেরা প্রাণ দিয়ে গেছেন।
আমরাও আগামীর বাংলাদেশকে সন্ত্রাস আর দুর্নীতির হাত থেকে রক্ষা করতে জুলাইয়ের শহীদদের মতো একই স্পৃহা নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলবো। আমাদেরকে ভয়, আতঙ্ক দেখানোর চেষ্টা করবেন এই সুযোগ আর কেউ পাবে না, ভোট ডাকাতদের এবার জনগণ দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিবে। জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী জীবন দিবে তবুও কোন সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দখলবাজদের ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতার মসনদে বসতে দেওয়া হবে না।
মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, জামায়াতে ইসলামীর চতুর্থ দফা কর্মসূচি রাষ্ট্র বিপ্লব। আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের মাধ্যমে এই বিপ্লব সংগঠিত করতে হবে। মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে আনতে কাজ করছে জামায়াতে ইসলামী। দুর্নীতি মুক্ত রাষ্ট্র গঠনে জামায়াতে ইসলামী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জামায়াতে ইসলামী এমন নেতৃত্ব জাতিকে উপহার দিতে চায়, যেই নেতৃত্ব দুর্নীতি নাই, সন্ত্রাস নাই, চাঁদাবাজ নাই। রয়েছে সৎ, যোগ্য, আদর্শিক ও নৈতিক মানবিক নেতৃত্ব।
ঢাকা-৬ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী ড. আব্দুল মান্নান বলেন, জামায়াতে ইসলামী জনগণের রায়ে নির্বাচিত হলে, পুরান ঢাকার ঐতিহ্য ফিরে আনা হবে। বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার করা হবে। দখল ও দূর্ষণ মুক্ত বুড়িগঙ্গা ঢাকাবাসীকে উপহার দেওয়া হবে। পুরান ঢাকার ব্যবসায়িবৃন্দ নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে পারবে। এক পয়সাও কাউকে চাঁদা দিতে হবে না। এখানে কোন সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, মাদক কারবারি থাকবে না। অমুসলিমদের অধিকার ক্ষুন্ন হতে দেওয়া হবে না। নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। ঢাকা-৬ সংসদীয় এলাকা হবে বৈষম্যহীন একটি কল্যাণ ও মানবিক উন্নত এলাকা। আমরা নির্বাচিত হলে শাসক আর শোষক হবো না, আমরা মানুষের সেবক ও খাদেম হবো। কথায় নয়, আমরা কাজে প্রমাণ দিতে প্রস্তুত রয়েছি। জনগণ সেই সুযোগ দিলে আমরা প্রমাণ করতে পারবো, জামায়াতে ইসলামী যা বলে, তাই করে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ইসলামি ছাত্র শিবিরের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি হেলাল উদ্দিন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামি ছাত্র শিবিরের সভাপতি মো. আসাদ প্রমুখ। এছাড়াও ঢাকা-৬ সংসদীয় এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের ১১টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীগণ উপস্থিত নেতৃবৃন্দের কাছে দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেন।